বাংলাদেশ যেহেতু মহাসাগরগুলো থেকে অনেক দূরে অবস্থিত সেহেতু এ দেশকে সরাসরি সামুদ্রিক ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে তেমন চিহ্নিত করা যায় না। তবে বাংলাদেশের উত্তরে আসামের খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া পাহাড়, হিমালয়ের পাদদেশ, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ভূমিকম্প প্রবণতা যথেষ্ট লক্ষ করা যায়। এছাড়াও রয়েছে ভূ-গাঠনিক গতিময়তা। সামগ্রিক দিক হতে দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে (চিত্র ১৪-৩)।
বাংলাদেশের পূর্বাংশে রয়েছে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত স্বল্প ভাঁজবিশিষ্ট ভঙ্গিল প্রকৃতির পাহাড়গুলোকে আসামের লুসাই এবং মিয়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রীয় বলে ধরা হয়। এ পাহাড়গুলো বেলেপাথর, সেলপাথর এবং কর্দম দ্বারা গঠিত। গঠনগত কারণে এ চত্বর ভূমিকম্পপ্রবণ। আবার রয়েছে পুরাতন পলল গঠিত প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ— বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং লালমাই পাহাড়। বাকি অংশ নবগঠিত প্লাবন সমভূমি। সুতরাং ভূতাত্ত্বিক গঠনগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশেষত উত্তর ও পূর্ব দিক যথেষ্ট ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল।
উত্তরে হিমালয় চত্বর এবং মালভূমি, পূর্বে মিয়ানমার আরাকান ইয়োমার অস্তিত্ব এবং উত্তর-পূর্বে নাগা- দিসাং-জাফলং অঞ্চলের সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ করে তুলেছে।
১৫৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প সংক্রান্ত রেকর্ড সংগৃহীত শুরু হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র উপকেন্দ্রের সঙ্গে তিন ধরনের পরিমাপ সম্পর্কযুক্ত। অগভীর কেন্দ্র (০-৭০ কিলোমিটার), মধ্য পর্যায়ের কেন্দ্র (৭০- ৩০০ কিলোমিটার) এবং গভীর কেন্দ্র ( ১,৩০০ কিলোমিটার)। সুতরাং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উপকেন্দ্র না থাকলেও সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হলে তার প্রভাব হিসেবে বাংলাদেশেও ভূকম্পন অনুভূত হয় ।
১৯৯৩ সালে সমগ্র বাংলাদেশকে তিনটি ভূকম্পনীয় সংঘটিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা— অঞ্চল ১ (মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ, রিখটার স্কেল মাত্রা ৭) ; অঞ্চল ২ (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ, রিখটার স্কেল মাত্রা ৬); অঞ্চল ৩ (কম ঝুঁকিপূর্ণ, রিখটার স্কেল মাত্রা ৫)। এ তিনটি অঞ্চলের অধীনে রয়েছে যথাক্রমে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, মধ্য অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (চিত্র ১৪.৪)। বাংলাদেশে সংঘটিত কয়েকটি ভূমিকম্পের সময়কাল, রিখটার স্কেল মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি নিচের সারণিতে দেখানো হলো।
সারণি ২ : বাংলাদেশে সংঘটিত কয়েকটি ভূমিকম্প
সাল | রিখটার স্কেলে | ক্ষয়ক্ষতি |
১২ই জুন, ১৮৯৭ | ৮.৭ মাত্রায় | ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন |
২২শে নভেম্বর, ১৯৯৭ | ৬.০ মাত্রায় | চট্টগ্রাম শহরে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয় |
২৭শে জুলাই, ২০০৮ | ৫.১ মাত্রায় | ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয় |
উৎস : বাংলাপিডিয়া
কাজ : ভূমিকম্প থেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুতিমূলক ৪টি কাজের তালিকা তৈরি কর।
ভূমিকম্পে করণীয় (What is to be done in earthquake)
অতীতকাল থেকে বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে প্রধানত ভূমিকম্প হয় গঠনগত কারণে। এছাড়া পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ার কারণেও কিছু স্থান প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে। এ দিক দিয়ে ঢাকা শহর উল্লেখযোগ্য। আবার অন্যদিকে ঢাকার উপর নগর গড়ার চাপ থাকায় ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ (Essential measures )
১। ভূমিকম্প সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।
২। সারাদেশে ভবন নির্মাণে জাতীয় ‘বিল্ডিং কোড' এবং কোডের কাঠামোগত অনুসরণ বাধ্যতামূলক হবে।
৩। ঢাকা শহরে রাজউকের ভবন নির্মাণ প্ল্যান অনুমোদনের নীতিমালা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
৪। সারাদেশে রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে।
৫। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো কর্তৃক তালিকা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সংরক্ষণ করতে হবে।
৬। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে স্বেচ্ছাসেবক দলগঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
৭। দুর্যোগকবলিত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে ‘ডগ স্কোয়াড’ রাখা ।
৮। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন ও মহড়া অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
৯। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক সিলেটে নির্মীয়মান কেন্দ্রের সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর এবং সিলেট কেন্দ্রের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা।
কাজ : ভূমিকম্পের পরে দুর্যোগকবলিত এলাকায় বহুবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত? আলোচনা অনুষ্ঠান ।
Read more